উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

প্রতিটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ হচ্ছে সত্যানুসন্ধান, জ্ঞান অনুশীলন। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর একনিষ্ঠ গবেষণা নতুন নতুন তত্ত¡ ও তথ্যের অনুসন্ধান ও আবিষ্কার। এ লক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ও বিভাগের আওতাধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় নানা ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এই প্রচেষ্টা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৮৪ কলা অনুষদের আওতাধীন একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, কলা অনুষদের আওতাধীন একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম “উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র” নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন ডিন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নিকট প্রস্তাব পেশ করেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ ব্যাপারে সকল বিভাগের মতামত জানতে এবং বিষয়টি আরো গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সভায় এজেন্ডা হিসেবে পেশ করার ব্যবস্থা করেন। সে লক্ষে ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসের ২৭ তারিখ বুধবার বিকাল ৪টায় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভার ১১ নং এজেন্ডায় “কলা অনুষদের আওতাধীন একটি উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিবেচনা” সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

নীতিগতভাবে অনুষদের আওতাধীন একটি উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ডীনের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সভা পরবর্তী বিবেচনার জন্য বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানের নিকট একটি ওয়ার্কিং পেপার পাঠাবার জন্য ডীনকে অনুরোধ করছে।
এই সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিন মহোদয় কলা অনুষদের অধীনস্থ সকল বিভাগের চেয়ারম্যানের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। এই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কলা অনুষদের প্রায় সকল বিভাগ থেকেই কলা অনুষদের আওতাধীন একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অনুকূলে লিখিত মতামত জানান হয়।
পরবর্তীকালে ০৩-১০-৮৩ তারিখে বোর্ড অব এডভান্সড স্টাডিজের এবং ০২-১১-৮৩ তারিখে একাডেমিক পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী “উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সিন্ডিকেটের ১৩-১২-৮৩ তারিখে “উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. আর. তরফদারকে সভাপতি এবং দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলামকে পরিচালক মনোনীত করা হয়।

কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য বিষয়

উদ্দেশ্য
১. কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগসমূহে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণ;
২. আন্তঃবিভাগীয় গবেষণাকে উৎসাহ দান ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি;
৩. বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা ও বক্তৃতার আয়োজন করা;
৪. গবেষণা নিবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করা; এবং
৫. গবেষণা বৃত্তি প্রদান
যেহেতু কলা অনুষদের আওতাধীন কোনো উচ্চতর গবেষণা সংস্থা এখনো নেই এবং যেহেতু গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান করা আবশ্যক, তাই “উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র” নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

গঠনতন্ত্র
১. ব্যবস্থাপনা পরিষদ
কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে একটি ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপর। পরিষদের সদস্যবৃন্দ হবেন :
ক) কলা অনুষদের ডিন :
খ) কলা অনুষদের সকল অধ্যাপক এবং
গ) অনুষদের যে সকল বিভাগের অধ্যাপক নেই তাদের চেয়্যারম্যান

২. সভাপতি
সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে উপচার্য মহোদয় সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দান করবেন। তাঁর কার্যকাল হবে দুই বছর।

৩. পরিচালক
সদস্যদের মধ্য থেকে সদস্যগণ একজন পরিচালক নির্বাচন করবেন, যার কার্যকাল হবে তিন বছর।

৪. ব্যবস্থাপনা পরিষদের দায়িত্ব
ব্যবস্থাপনা পরিষদের দায়িত্ব হবে কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিসমূহ প্রণয়ন, বার্ষিক বাজেট তৈরি ও অর্থ সংগ্রহ, প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ কেন্দ্রের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা। কেন্দ্রের সভাপতি পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। পরিচালক হবেন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান। তিনি কেন্দ্রের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং বার্ষিক হিসাব নিরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি পরিষদের সভা ডাকবেন। ব্যাংকের হিসাব সভাপতি ও পরিচালক যৌথভাবে পরিচালনা করবেন। পরিচালক নির্বাচনের পূর্বে সভাপতি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।

৫. অর্থ
কেন্দ্রের অর্থ সংগ্রহের উৎস হবে :
১) বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌনঃপুনিক ও উন্নয়ন বরাদ্দ;
২) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রকল্পভিত্তিক অনুদান;
৩) বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রকল্পভিত্তিক অনুদান;
৪) প্রতিষ্ঠানিক দান-অনুদান;
৫) ব্যক্তিগত দান-অনুদান; এবং
৬) কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ, জার্নালসহ বিভিন্ন প্রকাশনা বিক্রয়

৬. কমিটি
বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিষদ এক বছর মেয়াদে ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট নিম্নলিখিত কমিটিসমূহ গঠন করবে :
ক) প্রশাসন ও অর্থ কমিটি
খ) গবেষণা ও প্রকাশনা কমিটি; এবং
গ) এসব কমিটি ছাড়াও পরিষদ প্রয়োজন হলে অন্য যেকেনো কমিটি গঠন করতে পারেন।

৭. উপবিধি
উপরিল্লিখিত যেকোনো উপবিধি পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিষদের বিশেষ সভা আহবান করতে হবে এবং প্রস্তাবিত পরিবর্তন অনুমোদনের পক্ষে উপস্থিত সদস্যদের তিন চতুর্থাংশের সমর্থন থাকতে হবে।

অর্থ-সংস্থান
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যাদি থেকে জানা যায় যে, ১৯৮৪ সালে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এককালীন ৫০,০০০/= (পঞ্চাশ হাজার) টাকার অনুদান প্রদান করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এই অনুদানের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩,৮৫,০০০/= (তিন লক্ষ পঁচাশি হাজার) টাকা। পরবর্তীতে এই অনুদানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪,৫০,০০০(চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত অনুদান থেকেই কেন্দ্রের সকল ব্যয়বহন করা হয়। এছাড়া অন্যান্য আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ ও নিবন্ধমালা বিক্রয় ও সেমিনার হল ভাড়া।